‘আপনার অবসর কিভাবে কাটে’?

‘আপনার অবসর কিভাবে কাটে’?
এমন প্রশ্ন করা হলে আপনার উত্তর কী হবে?

মিডিয়া জগৎ সবসময় আমাদেরকে শেখায়, অবসর মানে হল মুভি দেখে, গান শুনে, গেম খেলে, ঘুরতে গিয়ে বা অন্য কোন বিনোদনে সময় কাটানো। যারা দ্বীন মেনে চলার চেষ্টা করেন তারাও অনেক সময় অবসর কাটানোর জন্য বেছে নেন হালাল বিনোদনের কন্টেন্ট, হালাল ফানি মিমস ইত্যাদি দেখা বা শেয়ার করাকে। ফেসবুক বা ইউটিউবে অহেতুক স্ক্রল করে হালাল কন্টেন্ট দেখাকে।

আচ্ছা, অবসর বলতে আমরা কী বুঝি? উপার্জন, পড়াশোনা বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজের ব্যস্ততায় আমাদের যে সময়টা পার হয় তা বাদে বাকি সময়টুকু তো?

আর এই সময়টুকু কি বিনোদনের জন্য? অলসভাবে পার করার জন্য? অথবা অন্য কোনভাবে ‘কাটানোর’ জন্য? কেমন হওয়ার উচিৎ একজন মুমিনের অবসর? কখনো ভেবেছি কি?

আচ্ছা, সময় কি ‘কাটানোর’ জিনিস? নাকি হাতছাড়া হওয়ার আগেই সঠিক ব্যবহার করার জিনিস?

কখনো কি ভেবেছি, দুনিয়ার উপার্জন বা অন্য প্রয়োজনীয় ব্যস্ততা থেকে অবসর হওয়ার পর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে আমার? একটা কাজে শ্রম দেয়া শেষ করে অন্য একটা কাজে শ্রম দিতে হবে আমাকে?

হ্যাঁ, এটাই মুমিনের জীবন। মুমিনের একটা কাজ থেকে অবসর মানে তো আরেকটা কাজের শুরু। দুনিয়ার প্রয়োজনীয় কাজের ব্যস্ততা শেষ মানে আখিরাতের ব্যস্ততা শুরু। একজন মুমিন দুনিয়ার কাজের চাপ থেকে অবসর হয়ে বিনোদন খুঁজবে না। সে মনে করবে, এবার আরো গুরুত্বপূর্ণ কাজে শ্রম দেয়ার সময় হয়েছে। আল্লাহর দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় হয়েছে।

আসুন আয়াতদুটি একটু দেখি,

فَإِذَا فَرَغۡتَ فَٱنصَبۡ ۝٧ وَإِلَىٰ رَبِّكَ فَٱرۡغَب ۝٨

“যখন অবসর হও তখন পরিশ্রম কর। এবং কেবল তোমার রবের দিকে মনোনিবেশ করো।” (সুরা আলাম নাশরাহ ৯৪:৭-৮)

দেখুন, মুমিনের অবসরের কাজ পরিশ্রম করা, বিনোদন খোঁজা না। শুয়ে বসে কাটানোও না। বিশ্রাম করবে বিশ্রামের প্রয়োজন হলে। যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু বিশ্রাম করবে।

আর দুনিয়ার প্রয়োজনীয় কাজেও সবটুকু সময় দিয়ে দেবে না। সবটুকু এনার্জি সেখানেই শেষ করে ফেলবে না। কারণ তাকে আল্লাহর দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য সময় বরাদ্দ রাখতে হবে। সেখানেও শ্রম দিতে হবে।
প্রয়োজন পরিমাণ বিশ্রাম নেয়া শরীরের হক। একজন মুমিন শরীরের হকের দিকেও লক্ষ্য রাখবে। সীমা রক্ষা করে মাঝে মাঝে বিনোদনও নিষিদ্ধ না। কিন্তু অবসর মানেই বিনোদনে সময় কাটানো একজন মুমিনের কাজ না।

পরিবারকে সময় দেয়াও পরিবারের হক। বাবা-মা, ভাই-বোন ও আত্মীয় স্বজনের সাথে সুসম্পর্ক রাখা এবং তাদের খোঁজ-খবর নেয়া একজন মুমিনেরই কাজ, কিন্তু এগুলো একজন মুমিনকে আল্লাহর ব্যাপারে উদাসীন করতে পারবে না। আল্লাহর সাথে সুসম্পর্ক তৈরির পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে না। হাজার ব্যস্ততার মধ্যেও সে কিছু সময় বরাদ্দ রাখবে শুধুই আল্লাহর জন্য। আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য।

এবার একটু নিজেদের হিসাব নেই। দুনিয়ার প্রয়োজনীয় ব্যস্ততা শেষ করে আল্লাহর দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্যও সময় রাখছি তো? রাখলে কতটুকু রাখছি?

শয়তান প্রতিনিয়ত চেষ্টায় থাকে আমাদের ঈমান দুর্বল করার আর আখিরাতকে ভুলিয়ে দেয়ার। আসুন না, দৈনিক কিছু সময় ঈমানের পরিচর্যা করি। আখিরাতকে স্মরণ করি।

আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন থাকার কারণে অন্তরে বিভিন্ন রোগ বাসা বাঁধে। আর আল্লাহ তাআলা কুরআন পাঠিয়েছেন এর আয়াতগুলো নিয়ে চিন্তা করে আমাদের অন্তরকে রোগমুক্ত করতে। আসুন কুরআন শিখতে, পড়তে, বুঝতে ও চিন্তা করতে দৈনিক কিছু সময় বরাদ্দ রাখি। এর মাধ্যমে অন্তরকে রোগমুক্ত রাখার চেষ্টা করি।

আসুন দৈনিক কিছু সময় বরাদ্দ রাখি ওয়াহির ইলম অন্বেষণের জন্য। কত বিদ্যাই তো শিখলাম আজীবন। আখিরাতের ইলম অর্জনের জন্য কিছু সময় দিতে না পারলে কিসের বিনিময়ে জান্নাতের প্রত্যাশা করব ভাইয়েরা? কিছুটা সময় থাকুক না আল্লাহর কিতাব, রাসুল সা. এর সুন্নাহ আর আল্লাহর বিধিবিধান শেখার জন্য।

কিছু সময় কাটুক না ভালো সোহবতে। কোন আখিরাতের মুযাকারার মজলিসে। তাকওয়াবান কিছু সঙ্গীদের সাথে। যাদের সঙ্গ আখিরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয়।

কিছু সময় কাটুক না নির্জনে আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে, সিজদায়, আল্লাহর ভয়ে চোখের পানি ফেলে।

পেরে উঠছেন না?

পারতেই হবে। কারণ যে জান্নাত পেতে চায় তার দুনিয়ার জীবনটা তো এমনই।

Join the Conversation
By - আবু খুবাইব

লক্ষ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি